এক বুক কষ্ট

কষ্ট (জুন ২০১১)

মোঃ আসির আহমেদ
  • ১৫
  • 0
  • ৭১
ভোর থেকেই কারো চোখে ঘুম নেই । যে মাজেদ সকাল নয়টার আগে ঘুম থেকে উঠার নামই করে না সেও ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বাধ্য হয়েই এই সাত সকালে নাসতা সারতে নিচে চলে গেছে । আমি আর শাকিল বিছানায় শুয়ে শুয়ে এক এলাহি কাণ্ডের দর্শক হয়ে রয়েছি । ব্যাপার খানা তেমন কিছুই নয়, আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস এবং আজ স্বপ্নের জীবনের প্রথম ডেটিংয়ের মাধ্যমে ভালোবাসা দিবস উদযাপন । এই জন্যই সেই ভোর থেকেই চার সদস্যের এই রুমটাতে চলছে মিনি বিশ্বযুদ্ধ আর এই যুদ্ধের সেনাপতি হচ্ছে আমাদের সবার প্রিয় স্বপ্ন এবং তার প্রতিপক্ষ হচ্ছে তার পোশাক, ঘড়ি, পারফিউম, সু, কোর্ট, টাই ইত্যাদি ইত্যাদি । তার এতগুলো জিনিসের মধ্যে কোনটাই পছন্দ করতে পারছে না । একটা গায়ে দিচ্ছে পরক্ষণে অন্যটা পছন্দ হচ্ছে । টাইগুলোকে সে মনে মনে ফাঁস ভাবতে শুরু করেছে । এত দামি দামি পারফিউম গুলোও তার মন ভরাতে পারছে না । ইতিমধ্যে চারবার শেভ করে ফেলেছে তারপরও সে অসস্তিতে ভুগছে, মনে হয় কোথায় যেন দাড়ি রয়ে গেছে । যাইহোক, তার এই যুদ্ধের মধ্যে স্বপ্নের পরিচয়পর্ব সেরে ফেলা যাক, গ্রামাঞ্চলের মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের সন্তান স্বপ্ন আহমেদ । পিতা উপজেলা চেয়ারম্যান । বাবা-মা, দুই ভাই আর একবোন নিয়ে স্বপ্নদের পরিবার । স্বপ্ন এ প্লাস নিয়ে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগে তার চঞ্চল পদচারণর দ্বিতীয় বছর অতিত্রুম করছে । স্বপ্ন, মাজেদ, শাকিল এবং আমিসহ আমরা থাকি ""রোদছায়া'' নামক মেসে । স্বপ্ন চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে হলেও মেয়েদের ব্যাপারে তার মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস কাজ করে । সেজন্য সে পারতপক্ষে মেয়েদের এড়িয়ে চলে । কিন্তু শত চেষ্টার পরও স্বপ্ন উপরওয়ালার এক অপূর্ব সৃষ্টি মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের অনা নামক মেয়েটিকে এড়াতে পারেনা । স্বপ্ন কখন যে অনার প্রতি দুর্বল হয়ে যায় তা সে নিজেও টের পায় না । সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ হলেও অনা খানিকটা অহংকারী মেয়ে । স্বপ্ন মুখে কিছু না বললেও তার আচরণে অনা বুঝতে পারে যে স্বপ্ন তার প্রেমে পড়েছে । কিন্তু সে কোন ভাবেই স্বপ্নকে পাত্তা দিতে রাজি নয় । এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর হঠাৎ মনে হয় অনার মন ভেঙ্গে স্বপ্নের জন্য নতুনভাবে গড়ে উঠে এবং তারই প্রেক্ষিতে আজ তাদের মধ্যে ভালোবাসার নামক পাখিটা বাসা বাঁধতে যাচ্ছে । যাইহোক কোন রকমে নিজেকে তৈরি করে আমাদের শুভ কামনা নিয়ে স্বপ্ন প্রায় সকাল আটটার দিকে বের হয়ে যায় । যদিও সাক্ষাৎ বা ডেটিং এর সময় ধার্য হয়েছে সকাল সাড়ে নটার দিকে কিন্তু স্বপ্ন যে আর তর সয় না । স্বপ্নকে দেখে আমাদেরও কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করতে শুরু করেছে । সে যাওয়ার পর আমরা বাকী অভাগারা স্বপ্নের প্রথম ডেটিং স্মরণীয় করে রাখার জন্য ছোটখাটো একটা পার্টির ব্যবস্থা করি যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমাদের মাজেদ ভাই । এবার শুধু স্বপ্নের শুভ প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা । কিন্তু এ অপেক্ষা যেন শেষ হতে চাচ্ছে না । দুপুর গড়িয়ে বিকাল, বিকাল থেকে সন্ধ্যা তারপর একসময় রাতও ঘনিয়ে আসে তবুও আমাদের স্বপ্নবাবুর দেখা নেই । ইতিমধ্যে আমাদের পার্টির সব আয়োজন স্বপ্নের অনুপস্থিতিতে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে সারতে হয় । দেখতে দেখতে রাত দশটা বেজে যায় তারপরও স্বপ্নের কোন দেখা নেই । এবার আমরা এক অজানা আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ি স্বপ্নের কিছু হয়নিতো ? । সাথে সাথে আমরা স্বপ্নের সন্ধানে বের হয়ে পড়ি । অনার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই আর স্বপ্নের মোবাইল তো সেই দুপুর থেকেই বন্ধ । শ্যামল ছায়া উদ্যান, জিয়া পার্ক, পদ্মা গার্ডেন, বিখ্যাত সব ফাস্টফুড, হাসপাতাল, থানাসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় আমরা খুঁজে দেখি কিন্তু স্বপ্ন বা অনা কারোরই খোঁজ নেই । পরদিন সকালে পত্রিকায় ছবিসহ এক অজ্ঞাত লাশের সন্ধান পাওয়ার খবর প্রকাশ হয় । আমাদের চোখ একমূহুর্তেই চিনে ফেলে এটা আর কারো নয় আমাদেরই প্রিয় স্বপ্ন । লাশটি পাওয়া যায় শ্যামল ছায়া উদ্যানের এক পরিত্যক্ত ড্রেনে । এসময় মনে হয় আমাদের হৃদয় যেন কোন গরম কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে । আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি । এটা কিভাবে হলো ? পরে জানতে পারি অনা কখনোই স্বপ্নকে ভালোবাসেনি বরং স্বপ্নের অতি সরলতা সে শশুধু বিরক্তই হতো । তাই স্বপ্নকে একটু শায়েস্তা করতেই সে বেছে নেয় ভালোবাসা দিবসকে । স্বপ্নের হাড়গোড় একটু সহান বিচ্যুত করতে ধনীর দুলালী অনা কিছু পেশাদার সন্ত্রাসীকে ভাড়া করে । স্বপ্ন শ্যামল ছায়ায় যাওয়ার পর তাকে নির্জন দিকে নিয়ে গিয়ে অনার নির্দেশে সন্ত্রাসীরা স্বপ্নকে বেশ ধোলাই করে । ভীতু স্বপ্ন সাথে সাথে ক্ষামত দিয়ে ব্যাথাত্রুামত হৃদয় ও শরীর নিয়ে ফিরে আসছিল কিন্তু যখন দেখল সন্ত্রাসীরা অনাকে একা
পেয়ে তার সতীত্ব হরণ করতে শুরু করেছে তখন সে কোন কিছু না ভেবেই সন্ত্রাসীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । এতে সন্ত্রাসীরা স্বপ্নের উপর ক্ষেপে গিয়ে তাকে ধারালো ছোঁড়া দিয়ে এমনভাবে আঘাত করে যে কিছুক্ষণের মধ্যে স্বপ্ন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আর সে দৃশ্য দেখে অনা অজ্ঞান হয়ে পড়ে । সন্ত্রাসীরা স্বপ্নের লাশ কোনরকমে পরিত্যাক্ত এক ড্রেনে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় । পড়ে কিছু লোক অনাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায় ।

একমাত্র অনাই স্বপ্নের এই অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী, একথা অনার মনে এত গভীরভাবে ছাপ ফেলে যে সে পুরোপুরি পাগল হয়ে মানসিক হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন । অনার মুখে এখন একটাই কথা স্বপ্ন আমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোমায় জীবন দিতে হলো, স্বপ্ন আমি তোমায় ভালোবাসি, শুধু তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি ।
এখন প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসে আমরা শোকাতুর হৃদয়ে স্বপ্নকে এবং তার একটুখানি ভালোবাসাকে কথা স্মরণ করি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
উপকুল দেহলভি গল্পটি খুব ভালো লাগলো; আপনাকে আমার ঘরে আমন্ত্রণ;
রওশন জাহান অসাধারণ করুন এক কাহিনী. খুব ভালো লাগলো.
মোঃ আসির আহমেদ banglai likhte na parar jonno agei khoma parthi....amar lekha samporke mantobbo korar jonno sobaike dhonnobad.....
মিজানুর রহমান রানা স্বপ্ন আমার একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোমায় জীবন দিতে হলো, স্বপ্ন আমি তোমায় ভালোবাসি, শুধু তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি ।------------Fine, U will be success
sakil ভালো লিখেছেন চমত্কার কাহিনী . ভালো লেগেছে , আগামী সংখায় লেখা চাই .শুভকামনা রইলো
শাহ্‌নাজ আক্তার উপর ওয়ালা কেন যে কিছু করছেননা .......এইসব সন্ত্রাসী দের ? আর কতদিন আমাদের এগুলো সইতে হবে ?

২১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪